রুকইয়াহ কী, কেন জরুরি এবং কিভাবে এটি আপনার আত্মিক ও মানসিক সুস্থতার পথ খুলে দিতে পারে?

রুকইয়াহ কী কেন জরুরি?

রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقيةشرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪) 

জিন বা শয়তানের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা

অনেক সময় মানুষ জিনের প্রভাব, ভয়, দুঃস্বপ্ন বা আচরণগত পরিবর্তনের শিকার হয় – এসব ক্ষেত্রে রুকইয়াহ অত্যন্ত কার্যকর।

বদনজর

হিংসুক দৃষ্টির প্রভাব অনেক গভীর হতে পারে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “নজর সত্য” (সাহিহ মুসলিম)।

আত্মিক ও মানসিক ভারমুক্তি

নানারকম মানসিক চাপ, অশান্তি দোয়া ও কুরআন-তিলাওয়াতের মাধ্যমে দূর হতে পারে।

সুন্নাহ অনুযায়ী নিরাময়

রুকইয়াহ নিজেই রাসূলুল্লাহ (সা.) দ্বারা প্রমাণিত একটি সুন্নাহ। তিনি নিজেও করেছেন এবং সাহাবীদেরকে শিখিয়েছেন।

ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য ৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

১) এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।

২) ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কিছু বিশ্বাস না করা। বরং এটা বিশ্বাস করতে হবে, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয় এবং আল্লাহ চাইলেই এর থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।

৩) এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হতে হবে।

৪) যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

ইসলামিক রেফারেন্স এবং শরীয়ত সম্মত দৃষ্টিকোণ

ইসলামিক-রেফারেন্স-এবং-শরীয়ত-সম্মত-দৃষ্টিকোণ

ইসলামে রুকইয়াহ একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যা মুসলিম সমাজে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। কোরআন এবং হাদীসে সম্পর্কিত অনেক আয়াত ও হাদীস পাওয়া যায়, যেগুলোর মাধ্যমে রুকইয়াহ-এর বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, সুরা আল-ফালাক (113) এবং সুরা আন-নাস (114) উভয়ই এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোরআন শরীফের এই সুরাগুলি শয়তানি প্রভাব, কালো যাদু, এবং মানুষের উপর খারাপ চোখের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

হাদীসে বর্ণিত আছে:

“যে ব্যক্তি তার শরীরের রোগ বা সমস্যার জন্য কোরআনের মাধ্যমে করে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্থতা পাবে।” (সহীহ মুসলিম)

এছাড়া, নবী (সাঃ) নিজেও রুকইয়াহ করেছিলেন, যা ইসলামে রুকইয়াহ এর প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়।

Soul Healing-এ এই সেবার পদ্ধতি

রুকইয়াহ সাধারণত একটি আধ্যাত্মিক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা সোল হিলিং বা আত্মা নিরাময়ে কার্যকর। এই সেবার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির মানসিক এবং শারীরিক সমস্যাগুলির সমাধান করা হয়। রুকইয়াহ-র সেবা শুরু হয় পেশেন্টের আধ্যাত্মিক ও শারীরিক অবস্থা যাচাইয়ের মাধ্যমে। এর পর, কোরআন থেকে নির্দিষ্ট আয়াত এবং দোয়া পাঠ করা হয়, যা শয়তানি প্রভাব, বদনজর বা কালো যাদুর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়।

রুকইয়াহ এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, যেন রোগী সুনির্দিষ্ট সমস্যাগুলির থেকে মুক্তি পায় এবং তার আত্মা শান্তি পায়। এর মাধ্যমে রোগী কেবল শারীরিক অসুস্থতা থেকেই মুক্তি পায় না বরং আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আত্মিক শান্তি অর্জন করে।

এই সেবার ধাপসমূহ এবং সময়সূচী

রুকইয়াহ সেশনের ধাপগুলি সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:

প্রথম ধাপ: রোগীকে পরামর্শ ও মূল্যায়ন
প্রথম সেশনে রোগীকে তার সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয় এবং তার শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। এর মাধ্যমে চিকিৎসার প্রাথমিক দিক নির্ধারণ করা হয়।

দ্বিতীয় ধাপ: কোরআনের আয়াত ও দোয়া পাঠ করা
রুকইয়াহ সেশনের দ্বিতীয় ধাপে রোগীর উপর কোরআন থেকে নির্দিষ্ট আয়াত এবং দোয়া পাঠ করা হয়। এটি রোগীকে শান্তি এবং সুরক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করে। কোরআন এবং হাদীসের দোয়া পাঠের মাধ্যমে রোগীর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উন্নতি হতে পারে।

তৃতীয় ধাপ: রোগীকে পরবর্তী পরামর্শ প্রদান
এই পরামর্শের মধ্যে রোগীকে আরও ভালো করার জন্য কিছু আধ্যাত্মিক পরামর্শ দেয়া হয়। এটি রোগীর সামগ্রিক আত্মিক উন্নতি ও সুস্থতার জন্য সহায়ক হয়।

Soul Healing-এ মূল্য ও বুকিং প্রক্রিয়া

রুকইয়াহ সেশন সাধারণত তিনটি ধাপে ভাগ করা হয় এবং সেশনগুলির জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

প্রথম সেশন: ৩০০০ টাকা

দ্বিতীয় সেশন: ২ হাজার টাকা প্রতি সেশন

অনলাইন সেশন: অনলাইন সেশন ফ্রি হতে পারে, তবে জটিল রোগী হলে সেশন ফি ১০০০ টাকা।

বুকিং প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং অনলাইনে অথবা সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে করা যেতে পারে। রোগী তার সমস্যাগুলি বিস্তারিতভাবে জানিয়ে রুকইয়াহ সেশন বুক করতে পারে এবং নির্দিষ্ট সময়ে সেশন গ্রহণ করতে পারে।

রোগীর অভিজ্ঞতা ও রিভিউ

রুকইয়াহ সেশনের মাধ্যমে অনেক রোগী তাদের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সমাধান পেয়েছেন। তাদের অভিজ্ঞতা অনেকেই ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন। বিশেষ করে, যারা মানসিক অশান্তি, কালো যাদু বা বদনজরে আক্রান্ত ছিলেন, তারা-এর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করেছেন।

“আমি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলাম, কিন্তু রুকইয়াহ সেশনের মাধ্যমে আমি শান্তি পেয়েছি। এটি আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে।” – একজন রোগীর অভিজ্ঞতা

“আমার অনেক শারীরিক সমস্যা ছিল, কিন্তু রুকইয়াহ সেশনের পর আমি অনুভব করেছি যে আমি অনেক ভালো বোধ করছি।” – অন্য একজন রোগী

প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

প্রশ্ন ১: রুকইয়াহ সেশন কার জন্য উপযুক্ত?
উত্তর: রুকইয়াহ সেশন তাদের জন্য উপযুক্ত যারা মানসিক, শারীরিক বা আধ্যাত্মিক সমস্যায় ভুগছেন, যেমন বদনজর, কালো যাদু, শয়তানি প্রভাব, উদ্বেগ বা হতাশা।

প্রশ্ন ২: রুকইয়াহ সেশন কত সময় ধরে চলে?
উত্তর: সাধারণত একটি সেশন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নিতে পারে, তবে এটি রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন ৩: অনলাইন সেশন নেওয়া সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, অনলাইন সেশন নেওয়া সম্ভব।

প্রশ্ন ৪: রুকইয়াহ সেশন কত সময় স্থায়ী হয়?
উত্তর: সাধারণত সেশনটি ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা স্থায়ী হয়, তবে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সময় পরিবর্তিত হতে পারে।

উপসংহার 

রুকইয়াহ ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি যা শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এটি মুসলিম সমাজে রোগ নিরাময়ের একটি পুরনো পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এটি কোরআন ও হাদীস ভিত্তি করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

রুকইয়াহ সেশন নেওয়ার কথা ভাবছেন? তাহলে প্রথমেই সঠিক তথ্য এবং অভিজ্ঞ সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে Soul Healing হতে পারে আপনার নির্ভরযোগ্য সঙ্গী – যেখানে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক পদ্ধতিতে সেশন পরিচালনা করা হয়, সম্পূর্ণ গোপনীয়তা ও আন্তরিকতার সাথে।

রাসূল (সাঃ)- এর নির্দিশিত চিকিৎসা পদ্ধিতির আলোকে জিন, জাদু, বদনজর, হাসাদ জনিত সমস্যা এবং সকল প্রকার শারীরিক – মানষিক রোগের চিকিৎসা করা হয়।