নজর লাগা রুকইয়াহ। আমাদের সমাজে “নজর” শব্দটি খুবই পরিচিত। আমরা প্রায়ই শুনি – “ওর উপর নজর লেগেছে”, “নজরের কারণে অসুখ হয়েছে”। অনেক সময় এ কথা কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নজর বা ‘আল-আইন’ কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত একটি বিষয়।
নজরের প্রভাব মানুষের শরীর, মন ও জীবনে গভীরভাবে পড়তে পারে। তবে সুখবর হলো – আল্লাহ্র নির্দেশিত রুকইয়াহ শারইয়াহর মাধ্যমে নজরের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
নজর লাগা বা ‘আইন’ কি? ইসলামিক ব্যাখ্যা
‘আল-আইন’ আরবিতে নজর বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর মানে হলো – কারও ঈর্ষা ভরা দৃষ্টি, যা অন্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“নিশ্চয়ই নজর (আল-আইন) সত্য।”
(সহিহ বুখারি, মুসলিম)
এর মানে, নজর কোনো কুসংস্কার নয়, বরং ইসলাম স্বীকৃত বাস্তবতা।
নজরের সাধারণ লক্ষণসমূহ
নজরের প্রভাবে মানুষ নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারে। যেমন:
- হঠাৎ করে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া
- মাথাব্যথা, অনিদ্রা ও ঘনঘন অসুস্থতা
- অকারণে ভয় বা দুঃস্বপ্ন
- শিশুদের ক্ষেত্রে অকারণে কান্নাকাটি
- ব্যবসা বা কাজে হঠাৎ অগ্রগতি থেমে যাওয়া
তবে মনে রাখতে হবে – সব সমস্যাই নজরের কারণে নয়। সন্দেহ হলে প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, তারপর রুকইয়াহ করা উচিত।
কিভাবে রুকইয়াহ এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে?
রুকইয়াহ শারইয়াহ হলো কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আয়াত, দোয়া ও যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহ্র কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
রুকইয়াহর মাধ্যমে সমাধান
- আল্লাহ্র কালামের বরকতে নজরের প্রভাব দূর হয়।
- রোগীর মনে প্রশান্তি আসে।
- ভয়, দুঃস্বপ্ন ও অকারণে দুশ্চিন্তা কমে যায়।
সবচেয়ে বড় কথা, রোগী বুঝতে পারেন তিনি আল্লাহ্র সুরক্ষার আওতায় আছেন।
কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক দোয়া ও সূরা
নজরের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে হাদীসে বর্ণিত নিম্নলিখিত দুআ ও সূরাগুলো সকাল-সন্ধ্যায় বিশেষভাবে পড়া হয়:
- بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। (তিরমিজি, হাদিসঃ৩৩৩৫)
- أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। (তিরমিজি, হাদিসঃ৩৫৫৯)
- সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। (তিরমিজি, হাদিসঃ৩৫৭৫)
- নজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার একটা সুন্দর দুআ আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা পড়ে হাসান এবং হুসাইন রা.-কে ফুঁ দিয়ে দিতেন। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই একই দুআ মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ. নিজের ছেলেদের (অর্থাৎ ইসমাইল এবং ইসহাক আ.) জন্য পড়তেন। (বুখারিঃ৩১৯১)
দুআটি হচ্ছে – أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
এই দুআ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দেবেন, নিজের জন্যও পড়বেন। ইনশাআল্লাহ বদনজর থেকে আল্লাহই হেফাজত করবেন।
দ্রষ্টব্য: অন্যের জন্য পড়লে أَعُوذُ (আউযু) এর জায়গায় أُعِيْذُكَ (উইয়ীযু) বলা ভালো, দু’জনের ক্ষেত্রে أُعِيْذُكُمَا আর অনেকজনের জন্য পড়লে أُعِيْذُكُمْ বলা ভালো। তবে সাধারণভাবে ‘আউযুবিকালিমাতিল্লাহ…’ বললেও সমস্যা নেই, এক্ষেত্রে নিয়ত করে নিতে হবে, কার জন্য পড়ছেন।
- সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দুআ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। কেননা বদনজর সত্য।’ (ইবনে মাজাহঃ ৩৫০৮)
নজর লাগার প্রতিকার ও সতর্কতা
প্রতিকার
- নিয়মিত রুকইয়াহ শারইয়াহ করা।
- আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং নামাজে মনোযোগী থাকা।
- সকালে-সন্ধ্যায় মাসনূন দোয়া পড়া।
সতর্কতা
- অন্যের প্রতি ঈর্ষা বা হিংসা না করা।
- প্রশংসা করার সময় “মাশাআল্লাহ” বলা।
- বাচ্চাদের জন্য নিয়মিত সূরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দেওয়া।
- ফেসবুক বা এরকম সোশ্যাল মিডিয়ায় অনর্থক শো-অফ না করা।
Soul Healing-এর নজর রুকইয়াহ সেবা পদ্ধতি
Soul Healing বিশেষভাবে নজর নিরাময়ের জন্য রুকইয়াহ সেশন পরিচালনা করে।
সেবা পদ্ধতি
- অভিজ্ঞ রুকইয়াহ হিলার দ্বারা আয়াত ও দোয়া পাঠ করা হয়।
- রোগীর জন্য পারসোনালাইজড সেশন তৈরি করা হয়।
- শিশু ও নারীর জন্য আলাদা সেশন ও পর্দার ব্যবস্থা থাকে।
- অনলাইন কনসালটেশনের সুবিধাও রয়েছে।
ফলে রোগীরা এক নিরাপদ আরামদায়ক ও ইসলামসম্মত পরিবেশে সেবা পান।
বাসায় কিভাবে রুকইয়াহ প্রয়োগ করবেন
সব সময় সেন্টারে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই বাসায়ও সহজভাবে রুকইয়াহ করা যায়।
- আবহাওয়া: রোগীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে বসানো।
- কুরআন পাঠ: সুরা ফাতিহা, সূরা বাকারাহ ,আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়া।
- ফুঁ দেওয়া: শেষে রোগীর শরীরে বা পানিতে ফুঁ দেওয়া।
- দোয়া: আল্লাহ্র কাছে সুস্থতার দোয়া করা।
ক্লায়েন্ট রিভিউ ও সফলতার গল্প
কেস স্টাডি:
একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী নিয়মিত মাথাব্যথা, অকারণ ক্লান্তি এবং পড়াশোনায় অমনোযোগীতায় ভুগছিলেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় শারীরিক কোনো অসুখ ধরা পড়েনি। পরে তিনি নজর রুকইয়াহ সেশন নেন। কয়েকটি সেশনের পর তার মাথাব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, পড়াশোনায় মনোযোগ ফিরে আসে এবং তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপনে সক্ষম হন।
তিনি বলেন:
“আমি ভেবেছিলাম এগুলো হয়তো শুধু মানসিক সমস্যা। কিন্তু রুকইয়াহ করার পর বুঝলাম, আল্লাহর কালামের মধ্যে সত্যিই শিফা আছে।”
FAQ: নজর ও আত্মরক্ষার উপায়
প্রশ্ন ১: নজর কি সত্যিই হয়?
উত্তর: হ্যাঁ। সহিহ হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে।
প্রশ্ন ২: নজর থেকে কীভাবে বাঁচা যায়?
উত্তর: সকাল-সন্ধ্যায় মাসনুন আমল করা এবং অনর্থক নিজের সুখ বা সমৃদ্ধির কথা কারো কাছে না বলা।
প্রশ্ন ৩: Soul Healing-এর রুকইয়াহ কি নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ, কারণ এখানে কেবল শারইয়াহ ভিত্তিক রুকইয়াহ করা হয়, কোনো বিদআত বা কুসংস্কার নেই।
রুকইয়াহর আলোয় প্রশান্ত জীবন
নজর সত্য এবং এটি মানুষের জীবনে বাস্তব প্রভাব ফেলে। তবে আল্লাহ্ আমাদের কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে এর সমাধান শিখিয়ে দিয়েছেন।
রুকইয়াহ শারইয়াহ হলো সেই সমাধান – যেখানে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক প্রশান্তিও পাওয়া যায়। নিয়মিত নামাজ, যিকির, দোয়া এবং রুকইয়াহর মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহ্র সুরক্ষায় থাকতে পারেন।
আজই নিজে ও পরিবারকে আল্লাহর নির্দেশিত ইসলামিক চিকিৎসার আলোয় নিয়ে আসুন, আর শুরু করুন এক নিরাপদ ও বিশ্বস্ত জীবনযাত্রা।